গোলকিপার একটি দলের গুরুত্বপূর্ণ সদস্য। কখনো গোলকিপারের অতি মানবীয় পারফর্মেন্স দলকে দেয় জিতিয়ে আবার কখনো গোলকিপারের ভুল ভরা ডুবি ঘটায় একটি দলের। তাই সেরা গোলকিপারের গুরুত্ব অনেক। দেখে নিন এবারের কাতার বিশ্বকাপের সম্ভ্যাব্য সেরা কিছু গোলপারের নাম ও পরিচিতি।

alison and Ederson


অ্যালিসন বেকার এবং এডারসন মোয়ারেস (ব্রাজিল)

আধুনিক ফুটবলে একজন গোলরক্ষকের প্রয়োজনীয় গুণের প্রায় সবকিছুই এ দুই ব্রাজিলিয়ানের মধ্যে রয়েছে। তারা দুজনই গত চার মৌসুম ধরে ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের সেরা গোলরক্ষকের স্বীকৃতি দখল করে রেখেছেন (অ্যালিসন দুবার এবং এডারসন তিনবার)। প্রিমিয়ার লিগের শিরোপা-প্রত্যাশী দুই ক্লাবের গোলরক্ষকের মধ্যে একজনকে ব্রাজিলের গোলবারের জন্য বেছে নেওয়া নিঃসন্দেহে কোচ তিতের জন্য এক মধুর সমস্যা।

যদিও গত কয়েক বছর ধরে নিয়মিত ব্রাজিলের গোলবার সামলাচ্ছেন অ্যালিসন। লিভারপুল অ্যালিসনের কারণে ম্যানসিটির এডারসনকে অধিকাংশ সময়েই জাতীয় দলে বেঞ্চ গরম করতে হয়েছে। তবে হেক্সা জয়ের মিশনে প্রয়োজনে দুজনকে ভাগাভাগি করেও কাতার বিশ্বকাপে ব্রাজিলের গোলবার সামলাতে দেখলেও অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না। হয়ত তাদের যৌথ কীর্তিতেই দুই দশক আগের মতো আবারও এশিয়ায় আয়োজিত বিশ্বকাপের সোনালী ট্রফি উঁচিয়ে ধরবে সেলেসাওরা।

Thibo Kortoya


থিবো কর্তোয়া (বেলজিয়াম)

৬ ফুট ৭ ইঞ্চি উচ্চতার কর্তোয়াককে  সময়ের সেরা গোলরক্ষক বললেও কেউ হয়ত খুব বেশি দ্বিমত করবে না। গত মৌসুমে লা লিগার পাশাপাশি ফাইনালে ম্যাচসেরা হয়ে রিয়াল মাদ্রিদকে চতুর্দশ চ্যাম্পিয়ন্স লিগ শিরোপা এনে দিয়েছিলেন এ বেলজিয়ান।

চার বছর আগে রাশিয়া বিশ্বকাপে বেলজিয়ামকে তৃতীয় করতে বড় ভূমিকা রেখেছিলেন বড় ভূমিকা। পাশাপাশি নিজেও জিতে নিয়েছিলেন সেরা গোলরক্ষকের পুরস্কার গোল্ডেন গ্লাভস। বেলজিয়ামের সোনালি প্রজন্মকে অধরা বিশ্বকাপ শিরোপা এনে দিতে কাতারেও সেরকমই কিছুর পুনরাবৃত্তি করতে হবে ৩০ বছর বয়সী গোলরক্ষকের।

Emiliano Martinez


এমিলিয়ানো মার্টিনেজ (আর্জেন্টিনা)

২৯ বছর বয়সী গোলরক্ষক যেন আর্জেন্টিনার জন্য স্বয়ং ফুটবল দেবতার কাছ থেকে আশীর্বাদ হয়ে এসেছেন। আলবিসেলেস্তেদের হয়ে অভিষেকের পর থেকে এখনও হারের মুখ দেখেননি মার্টিনেজ। গোলবারের সামনে অসামান্য নৈপুণ্যের মাধ্যমে ২৮ বছর পর ২০২১ সালে আকাশী-সাদাদের এনে দিয়েছিলেন কোপা আমেরিকার শিরোপা, সঙ্গে হয়েছিলেন টুর্নামেন্টের সেরা গোলরক্ষকও। এছাড়া, গত জুনে লাতিন আমেরিকান পরাশক্তিদের ফিনালিসিমা জেতাতেও রেখেছেন বড় ভূমিকা।

আসন্ন কাতার বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনা সমর্থকরা তাই তাকিয়ে থাকবে এমি মার্টিনেজের দিকেই। কারণ গোলবারের সামরে ৩০ বছর বয়সী গোলরক্ষক যত সাবলীল থাকবেন, আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপ জয়ের সম্ভাবনা ততই বাড়বে। মার্টিনেজ অবশ্য বিশ্বকাপের সেরা গোলরক্ষক হওয়ার লক্ষ্য স্থির করেছেন। তিনি যদি সত্যিই তা পারেন, তাহলে বিশ্বকাপের জন্য আলবিসেলেস্তেদের ৩৬ বছরের অপেক্ষার অবসান কাতারে হবে নিশ্চিতভাবেই।

Nuer-Careerhelpbd


ম্যানুয়েল নয়্যার (জার্মানি)

গোলরক্ষক হয়েও অর্জন আর মাঠের নৈপুণ্য দিয়ে যে কয়জন বিশ্ব ফুটবলের বড় তারকা হিসেবে নিজের নাম উজ্জ্বল করেছেন, তাদের মধ্যে একজন ম্যানুয়েল নয়্যার। পেশাদার ক্যারিয়ারে সুইপিং কিপিংকে নতুন মাত্রা দেওয়া গোলরক্ষক ২০১৪ সালে ব্রাজিলে অনুষ্ঠিত বিশ্বকাপে জার্মানিকে শিরোপা জেতাতে বড় ভূমিকা রেখেছিলেন। গোলপ্রহরী হয়েও ২৪৪ পাস এবং চার ক্লিনশিটে সেবার জিতে নিয়েছিলেন বিশ্বকাপের সেরা গোলরক্ষকের পুরস্কার গোল্ডেন গ্লাভস। বছর শেষে ব্যালন ডি অরের সেরা তিনেও জায়গা করে নিয়েছিলেন জার্মান, যা গত দুই দশকে করে দেখাতে পারেননি আর কোনো গোলরক্ষকই। যদিও তার নেতৃত্বে জার্মানি গ্রুপপর্বে বিদায় নেওয়ায় গত বিশ্বকাপটি ভুলে যাওয়ার মতোই গিয়েছিল নয়্যারের জন্য।

২০১০ সালে জার্মানির তৃতীয় সর্বকনিষ্ঠ গোলরক্ষক হিসেবে বিশ্বকাপে অভিষেক হয়েছিল ম্যানুয়েল নয়্যারের। ৩৬ বয়সী গোলরক্ষক কাতারে চতুর্থবারের মতো বিশ্বকাপ খেলবেন। নিজের দিনে আজও প্রতিপক্ষের আক্রমণভাগের জন্য দুঃস্বপ্নের মতো আবির্ভূত নয়্যার যদি কাতারে সেরা ছন্দে থাকেন, তাহলে বছর আগের সুখস্মৃতি পুনরাবৃত্তি করার প্রত্যাশা রাখতেই পারে জার্মানি।

Mendi-Careerhelpbd


এদুয়ার্দো মেন্ডি (সেনেগাল)

বর্ণময় এক ক্যারিয়ারে গত দুই বছরে প্রতিনিয়ত নিজেকে ছাড়িয়ে গিয়েছেন এদুয়ার্দো মেন্ডি। ২০২০ সালে চেলসিতে যোগদানের পর গত বছর ২৬ বছর পর প্রথম আফ্রিকান গোলরক্ষক জিতে নিয়েছেন উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লিগসহ সম্ভাব্য সব আন্তর্জাতিক শিরোপা। সঙ্গে পেয়েছেন উয়েফা এবং ফিফার বর্ষসেরা গোলরক্ষকের পুরস্কারও। বছরের শুরুতে সেনেগালকে দেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো আফ্রিকান নেশন্স কাপ জেতাতেও ৩০ বছর বয়সী গোলপ্রহরী রেখেছিলেন অগ্রণী ভূমিকা, যার প্রমাণ টুর্নামেন্টের সেরা গোলরক্ষকের স্বীকৃতি।

ক্লাব জাতীয় দলের হয়ে মহাদেশীয় সব শিরোপা জেতার পর এই সেনেগালিজ গোলরক্ষকের দৃষ্টি এবার ফিফা বিশ্বকাপের দিকে। ২০০২ সালে এশিয়ায় আয়োজিত প্রথম বিশ্বকাপে সবাইকে চমকে দিয়ে কোয়ার্টার ফাইনালে পৌঁছে গিয়েছিল অভিষিক্ত সেনেগাল। দুই দশক পর এশিয়ায় অনুষ্টিতব্য বিশ্বকাপে আফ্রিকান দেশটি সেরকম কোনো কীর্তি গড়তে বা ছাড়িয়ে যেতে তাকিয়ে থাকবে মেন্ডির দিকে।

সৌজন্যে: ঢাকা ট্রিবিউন।